বিচারকের বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ

প্রকাশঃ অক্টোবর ২৫, ২০১৫ সময়ঃ ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

judge২ঢাকায় এক বিচারকের বাসায় পনের মাস ‘আটক রেখে’ ১২ বছর বয়সী গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ক্ষতচিহ্ন নিয়ে মাগুরায় নিজের বাড়িতে পালিয়ে যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা শনিবার দুপুরে খাদিজা নামে ওই শিশুকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

চিকিৎসকও বলছেন, ওই শিশুর শরীরে একাধিক ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। শিশুটির বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামে; বাবার নাম সলেমান সর্দার ও মা ডালিম বেগম।

আর যাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তারা হলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকায় জাতীয় আইন সহায়তা প্রদান সংস্থার উপ-পরিচালক (প্রশাসন) রকিবুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শামীমা ইসলাম। রকিবুল ইসলামের বাড়িও মাগুরায়; মহম্মদপুর উপজেলার বরুলিয়া গ্রামে।

রকিবুল এর আগে সিলেটের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক ছিলেন। তখন তিনি সিলেট জেলা আইন সহায়তা কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

শিশুটির মা ডালিম বেগম জানান, অভাব-অনটনের কারণে দেড় বছর আগে গ্রাম্য প্রতিবেশী আবুল বাশারের মাধ্যমে ঢাকায় বিচারক রকিবুল ইসলামের বাসায় মাসিক এক হাজার টাকা চুক্তিতে কাজ করতে পাঠান। তার পর থেকে মেয়ের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না।

তিনি হাসপাতালে বলেন, রকিবুল ও তা স্ত্রীর মোবাইলে ফোন করলেও তারা কখনও ফোন ধরতেন না। প্রতিবেশী আবুল বাশারের কাছে মেয়ের খোঁজ নিতে গেলে তিনি শুধু বলতেন, ‘খাদিজা ভালো আছে’।”

ডালিম বেগম জানান, এভাবে ১৫ মাস যোগাযোগহীন অবস্থায় থাকার পর খাদিজা অসুস্থ অবস্থায় পালিয়ে শনিবার ভোরে বাড়ি ফেরে।

মাগুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খাদিজা বলেন, কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে উত্তরায় রকিবুলের ও বসুন্ধরায় তার শ্বশুরের বাসায় তাকে রান্না ছাড়া সব ধরনের কাজ করতে হত।

তার অভিযোগ, রকিবুল ও তার স্ত্রী নানা অজুহাতে প্রতিদিন তাকে চড়, থাপ্পড়, শরীরে গরম খুনতির ছ্যাঁকা ও গরম পানি ঢেলে নির্যাতন করত। দিনে একবেলা খেতে দিত, তা-ও পচা-বাসি খাবার। অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা করতো না।

প্রায় দুই মাস আগে রকিবুলের স্ত্রী শামীমা ইসলাম বটি ও ছুরি দিয়ে আঘাত করে বলে অভিযোগ করে হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতচিহ্ন দেখিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে শিশুটি।

খাদিজা বলে, “নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরার বাসার গার্ডকে ১০ টাকা দিয়ে একটি পাউরুটি কেনার জন্য পাঠিয়ে কৌশলে আমি পালিয়ে আসি।”

পরে সাভার হয়ে শুক্রবার রাতে পুলিশের সহায়তা নিয়ে বাসে করে শনিবার ভোরে সে বাড়ি পৌঁছে।

খাদিজার ক্ষতচিহ্নগুলোর বিষয়ে মাগুরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাইমানুল হক বলেন, “খাদিজার শরীরের ‘ওল্ড ইনজুরি’ আছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা দেখে তার শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে প্রতিবেদন দেবেন।”

সদর থানার ওসি মুন্সি আছাদুজ্জামান বলেন, “শিশুটির শরীরের নতুন কোনো নির্যাতনের চিহ্ন নেই; তবে পুরাতন দাগ রয়েছে। নির্যাতনের বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।”

অভিযোগ পেলে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সদর থানার এসআই তৌহিদুর রহমান বলেন, দুপুরে মেয়েটি (খাদিজা) হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় তিনি রকিবুল ইসলামের সঙ্গে ফোন করে ঘটনা জানতে চান। “তিনি (রকিবুল) বলেন, ‘আমি ঢাকার বাইরে আছি। শুনেছি বাসার কাজের মেয়েটা পালিয়েছে। বাসার ঘটনার বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না’।”

কিন্তু এর পর থেকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে রকিবুল ইসলামের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

প্রতিক্ষণ/এডি/এসএবি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G